চাঁদপুরে অভাবের তাড়নায় ৩৮ হাজার টাকায় শিশু বিক্রি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চাঁদপুরে অভাবের তাড়না ও এনজিও আশা সমিতির ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ১১ দিনের একটি শিশু সন্তানকে প্রথমে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। এ খবর প্রশাসনের কাছে যাওয়ার পর আশা সমিতির অফিস কর্মকর্তারা হতদরিদ্র কুলছুমা বেগমের কাচ্চা কলোনির বাসায় ছুটে গিয়ে শিশুটিকে ক্রয় করা মিজান-সুফিয়া দম্পতির কাছ থেকে এনে কুলছুমার কাছে ফিরিয়ে দেন।

এছাড়া তাদের এনজিও আশার ঋনের ৭০ হাজার টাকার বইসহ সকল কাগজ পত্র নিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত হন বলে কুলছুমার কাছ থেকে জানা যায়।

পরে এলাকার নাজমা বেগমের পরামর্শে তার মাধ্যমে মাত্র ৩৮ হাজার টাকায় ২য় বারের মত এক নবজাতক কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে হতদরিদ্র এক দম্পতি।

গত ৪ অক্টোবর শিশুটি কুলছুমার বাসায় জন্মগ্রহণ করে। শনিবার রাতে শহরের উত্তর শ্রীরামদী কাচ্চা কলোনি সংলগ্ন কবরস্থান রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর পূর্বে শিশুটিকে গত সোমবার বিক্রি করা হয়েছিল।

এলাকাবাসীর সাথে যোগাযোগ ও খবর নিয়ে জানা যায়, পরপর চারজন কন্যা সন্তান জন্ম হওয়া এবং অভাবের তাড়নায় দারিদ্রতার কারণে ঋণ পরিশোধের জন্য সন্তানটি বিক্রি করেছেন কুলছুমা। যদিও নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করবেন বলে জানিয়েছেন শিশুকে ক্রয় করে নেওয়া নিঃসন্তান দম্পতি সৌদি প্রবাসী মিজানুর রহমানের স্ত্রী সুফিয়া বেগম।

নবজাতক শিশু সন্তানের মা’ কুলছুমা বেগম জানান, সন্তানটি বিক্রি করি নাই। সন্তান লালন-পালন করতে পারবো না বলে শিশুকে পালক (দত্তক) দিয়েছি। আমার বাসার কাছাকাছি লোকের কাছে দিয়েছি যেন সব সময় গিয়ে দেখতে পারি। যারা শিশুটিকে নিয়েছে, তারা আমার চিকিৎসা করানোর জন্য ৩৮ হাজার টাকা আমাকে সাহায্য করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সকাল ১১টায় চতুর্থ কন্যা সন্তান জন্ম দেন কুলছুমা বেগম। নাম রাখেন হাফসা আলী। চতুর্থবার কন্যা সন্তান হওয়ায় কুলছুমা বেগমের স্বামী দ্বীন ইসলাম স্ত্রীকে বিভিন্ন প্রকার গালমন্দ ও তাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।

স্ত্রী কুলছুমা বেগম, তিন সন্তান ইয়াসমিন, লাবনী ও তাছলিমা হওয়ার পূর্বে দ্বীন ইসলামের সাথে তার বিয়ে হয়। দ্বীন ইসলাম এর পূর্বে নাজমা বেগম নামে একজনকে বিয়ে করেন। সে ঘরে দ্বীন ইসলামের ১ ছেলে ১ মেয়ে রয়েছে। পেশায় তিনি একজন জেলে হলেও বর্তমানে চাঁদপুর শহরের রিকসা চালক।

দ্বীন ইসলামের স্ত্রী কুলছুমা তার স্বামীকে আশা সমিতি থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি জেলে নৌকা ক্রয় করেন। সেটি চুরি হয়ে যাওয়ায় সে এখন রিকসা চালকের পেশা বেছে নিয়েছেন। আয় কম। একদিকে চার কন্যা সন্তান, অপরদিকে ঋণের ৭০ হাজার টাকা। কোনো উপায় না পেয়ে ৩৮ হাজার টাকার বিনিময়ে সন্তান বিক্রি করে দেন কুলছুমা ও দ্বীন ইসলাম দম্পতি। বোনকে বিক্রির কথা তরতর করে বলে দিলো বড় বোন লাবনী।

শহরের হরিজন কলোনির স্কেভেজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া লাবনী আক্তার বলেন, আমার বোনকে বাবা-মা একজনের কাছে বিক্রি করে তাদের কাছে দিয়া দিছে। এ শিশু বিক্রির ব্যাপারে লিখিত কাগজপত্র হয়েছে। তাতে স্বাক্ষর করেছে, আমার বাবা, মা, নানি ও মামা।

বিষয়টি স্বীকার না করে লাবনীর মা কুলছুমা বেগম জানান, যেহেতু সন্তানকে লালন-পালন ও মানুষ করার সাধ্য আমার স্বামীর নাই। অন্তত সন্তান বেঁচে থাকুক এমন আশা করেই সন্তান অন্যের দিয়ে দিয়েছি। শিশু হাফসাকে দিয়ে দেওয়ায় যে ৩৮ হাজার টাকা পেয়েছি, তা’ দিয়ে ঋণ কিছুটা পরিশোধ করা যাবে। কী করবো? এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না আমার।

ঘরে তিন মেয়ে আছে। তার উপর এনজিও আশা সমিতির থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণের বোঝা আমার মাথায়। সব মিলিয়ে মেয়ের বেচে থাকা তার ভবিষ্যতে কথা চিন্তা করে এ পথ বেছে নিয়েছি।

অপরদিকে একই এলাকার সৌদি প্রবাসী মিজানুর রহমানের স্ত্রী সুফিয়া বেগমের সন্তান না হওয়ায় তিনি দীর্ঘ দিন সন্তান নেয়ার চেষ্টা করছেন। হাফসাকে পেয়ে সুফিয়া অনেক খুশি হয়েছেন। নবজাতক শিশুটিকে পেয়ে নিঃসন্তান দম্পতি সুফিয়া মিজান অত্যান্ত খুশি হয়ে খোদার কাছে ফরিয়াদ করছেন শিশুটিকে বেচেঁ থাকার জন্য। নতুন করে শিশুর নাম রেখেছেন মরিয়ম আকতার ফাতিমা।

ইতোমধ্যে বাজার থেকে দুধসহ আনুসাঙ্গিক সব কিনে এনেছেন। সুফিয়া বেগম  বলেন, আমার নিজের সন্তান নেই। তাই দীর্ঘ দিন ধরে নবজাতক কেনার চেষ্টা করছিলাম। নিজের সন্তানের মতোই মানুষ করবেন বলে জানান শিশুর বর্তমান দত্তক নেওয়া মা সুফিয়া বেগম।

এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানকে অবগত করা হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর